অ্যালান টুরিং কে না চিনলে একটু উইকিপিডিয়া ঘাটাঘাটি করলেই পেয়ে যাবেন । এখানে একটু বলে রাখি । অ্যালান টুরিং হচ্ছে একজন ইংরেজ গণিতবিদ ,কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট , ফিলোসফার এবং আরো অনেক বিষয়ে তার ছিলো বিস্তর জ্ঞান ।
![]() |
| Alan Turing |
১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা । তৎকালীন বিশ্বে সকল পরাশক্তি এবং বেশিরভাগ রাষ্ট্রই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং দুইটি বিপরীত সামরিক জোটের সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৩০টি দেশের সব মিলিয়ে ১০ কোটিরও বেশি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ খুব দ্রুত একটি সামগ্রিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং সামরিক ও বেসামরিক সম্পদের মধ্যে কোনরকম পার্থক্য না করে তাদের পূর্ণ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রয়োগ করা শুরু করে।
পূর্ব এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে জাপান ইতোমধ্যেই ১৯৩৭ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনে আক্রমণ করে। পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
এই অংশটুকু অনেকেই জানেন । তারপরেও একটু লিখে দিলাম কারণ টুরিং মেশন মূলত আবিস্কার হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ।
অ্যালান টুরিং তখনকার সময়ে যুক্ত্ররাজ্যের Government Code and Cypher School (GC&CS) এর জন্যে কাজ করতেন । (GC&CS) মূলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে । যার নাম পরিবর্তন করে এখন রাখা হয়েছে Government Communications Headquarters । GC&CS এর একটি সেকশন HUT 8 তিনি তখন লিড করতেন । ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিরা তখন তাদের মিলিটারি কমিনিকেশনের জন্যে এনিগমা মেশিন ( Enigma machine ) দিয়ে তাদের সকল মেসেজকে ইনক্রিপ্ট করে দিতো যেনো তাদের পাঠানো মেসেজ অন্য কারো হাতে গেলেও সে সেটা পড়তে না পারে । এনিগমা মেশিনে ইংরেজি বর্ণমালার ২৬ টি অক্ষরের দিয়ে কোন নরমাল লিখা (plain text) দিলে সে লেখাটিকে সাইফারটেক্সটে (Ciphertext) কনভার্ট করে দিতো যা দেখতে অনেকগুলো সংখ্যার সমন্বয়ের মত দেখতে ছিলো ।
![]() |
| এটা একটি টেলিগ্রাম যেটি সাইফারটেক্সটে কনভার্ট করে ওয়াশিংটন থেকে ম্যাক্সিকোতে পাঠানো হয়েছিলো |
![]() |
| ডিক্রিপট করার পর মেসেজটি |
অ্যালান টুরিং ও তার HUT8 কে বলা হয়েছিলো জার্মানদের পাঠানোর এনিগমা (Enigma ) মেসেজকে যেনো পড়া যায় সে রকম একটি সিস্টেম তৈরি করতে । তখন অ্যালান টুরিং তার টুরিং মেশিন আবিস্কার করেন যার মাধ্যমে জার্মানি মিলিটারির সাইফারটেক্সটকে ডিক্রিপ্ট করা সম্ভব হয়েছিলো । টুরিং মেশিনে তিনি একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করেছিলেন যার মাধ্যমে সাইফারটেক্সটের প্রতিটি সিম্বলকে ম্যানিপুলেট করা যেতো ।
উনার এই টুরিং মেশিনের আবিস্কারের পর জার্মানিদের সকল বার্তা ফাঁস হতে থাকে । যার ফলে জার্মানিদের পরাজিত করতে সহজ হয়েছিলো এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধ আরো দুই বছর আগে শেষ হয়ে যায় আর প্রায় ১৪ মিলিয়ন মানুষ ২য় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে প্রাণে বেচে যায় ।
বলা যায় টুরিং মেশি্নের আবিস্কারই ছিল কম্পিউটার যুগের সূচনা। উনার এই টুরিং মেশনই কম্পিউটেশন ও কম্পিউটার এলগরিদমের ধারণা জন্ম দেয় । টুরিংকে ব্যাপকভাবে থিওরিটিক্যাল কম্পিউটার সাইন্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জনক হিসাবে বিবেচনা করা হয় ।



No comments:
Post a Comment